মৃত্যুর নাম সিগারেট লিখেছেন-আজিজুল ইসলাম
‘সিগারেট স্বাস্থ্যর পক্ষে ক্ষতিকর’ এ বাক্য আমাদের কাছে আজ জলভাত। তবুও আমরা লক্ষ্য করি সিগারেট খাওয়ার ধুম বেড়ে চলেছে। আমাদের পোশাকিভদ্র নাগরিক সমাজ প্রতি মিনিটে ৩কোটি সিগারেটকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে ‘সাইনিং ইন্ডিয়া’ গঠনে ব্যস্ত্ম। এমনকি রাজ্যর নাম করা ক্যান্সার চিকিৎসকদের ২৫ শতাংশ চিকিৎসক সিগারেটের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক এত যে ভুলেই যাইমৃত্যুর নাম সিগারেট।এ নেশা ছাড়া কতখানি কঠিন * প্রতি ১০ জন মদ্যপায়ীর মধ্যে ১ জন নিয়মিত মদ খান। * প্রতি ১০ জন ধূমপায়ীর মধ্যে ৯ জন নিয়মিত সিগারেট খান। (বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সমীক্ষা) কতটা ক্ষতিকর এই বিষকাঠিযখন কেউ ধূমপান করেন তখন
ধরনের জিনিস শরীর গ্রহণএকটি গ্যাসীয় অংশ। অন্যটি টার জাতীয় অংশ।
প্রথমাংশে প্রায় ৩০০০ পদার্থথাকে। অন্যটিতে থাকে ১০০০ পদার্থ। অংশটি মারাত্মক ক্ষতিকর।পদার্থ দুটি মারাত্মক ক্ষতি করে -
১) ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারিডিজিজ (সি ও পি ডি)। ২) ক্যানসার। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সি ও পি ডি) অনবরত সিগারেট খাওয়ার ফলে ফুসফুসের অ্যালভিউলার কোষ গুলি নষ্ট হতে থাকে। ফলে অ্যালভিউলার কোষ গুলিতে যুক্ত বাতাস জমতে পারেনা। ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ক্রমেই কমতে থাকে। এর ফলে ধুমপায়ীরা না পারে নিঃশ্বাস নিতে, না পারে ছাড়তে। একটু দৌড় ঝাপ করলেই হাঁফাতেথাকেন। এ রোগ ক্যানসারের মতো১-২ বছরে সাবাড় করে দেয় না, তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগিয়ে যন্ত্রনাকর পরিসমাপ্তিঘটায়।
২)ক্যানসার ঙ্ পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫৬ লক্ষ মানুষ ধূমপান জনিত ক্যানসারে মারা জান।২০২০ সালে ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।ভারতবর্ষে যত রোগী ক্যানসারে মারা যান, তার অর্ধেক ধূমপায়ী। ( ি ব শস্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা) ৮৫% মুখের ভিতরে ক্যানসার হওয়ার পিছনে বিড়ি, সিগারেট সহ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার মূল কারন। (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ রিপোর্ট) হৃদরোগ সিগারেটে প্যারাবেনজো কুইনোন নামে একধরনের যৌগ থাকে। এই যৌগ হার্টের কোষ গুলিকে নষ্ট করে। এতে হার্টে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রক্তনালী গুলি একে একে নষ্ট হতে থাকে। এরফলে রক্তের মূল্যবান প্রোটিন অ্যালবুমিন বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে এগুলি জমতে জমতে একদিন হার্টের ভালবের মুখ বন্ধ করে দিয়ে মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু ঘটায়।ঙ্ পৃথিবীতে প্রতি বছর ১ কোটি ২০লক্ষ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত্ম হয়ে মারা যান। এর মধ্যে অর্ধেক শতাংশের মৃত্যুরই মূল কারন সিগারেট। – (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট সিগারেটের প্যারাবেনজো সেমিকুইনোন রক্তের মূল্যবান প্রোটিন অ্যালবুমিন নষ্ট করে দেয়। অথচ আমরা ঔষধ, মাছ, মাংস, ডিম, সব্জি, ফলমূল ইত্যাদি যা খাই তা অ্যালবুমিনের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়। ফলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। সেই জন্য আমরা দেখি ধূমপায়ীদের কড়া ডোজের ঔষধ না দিলে কাজ হয় না।ব াড প্রেশার ধূমপান রক্তে লোহিত রক্ত কনিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্যে করে। ফলে ব াড প্রেশার বেড়ে যায়। চোখের ক্ষতি সিগারেট খাওয়ার জন্য টোবাকো
অ্যাম্বলায়োপিয়া নামে একটি রোগ হয়। এই রোগে চোখে অপটিক নার্ভ শুকাতে থাকে। ফলে মানুষটি দৃষ্টি শক্তি হারাতে শুরু করে।
ডায়াবেটিস ঙ্ পরিসংখ্যান বলছে সিগারেট খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
ভালো দিক ধূমপানের একটি ভালো দিকওরয়েছে। ধূমপানের ফলে মনের তরতাজা ভাব আসে। তবে এতে ভালোর চেয়ে মন্দ দিক বহুগুন বেশি। সুতরাং ধূমপান না করাই কাম্য।ছাড়ার উপায় ধূমপান ছাড়াটা সম্পূর্নভাবে মানসিক ব্যাপার। যদি কেউ মনে করেন তিনি আর কোনও দিন নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন না তাহলে তার পক্ষে নেশা ছাড়া সম্ভব। সিগারেটের নেশা মূলত কৈশোর, যৌবন বয়স থেকে শুরু হয়। এই সময় বন্ধু-বান্ধবদের পাল ায় পড়ে অনেকেই সিগারেট খাওয়া শুরু করেন। তারপর নেশায় পরিণত হয়। সুতরাং বন্ধু ও পরিবেশ নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।সিগারেটের পরিবর্তে আমলকি, জোয়ান, লবঙ্গ, পানের কথা ভাবা যেতে পারে। সিগারেট ছাড়ানোর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা বড় ভূমিকা নিতে পারেন। ধূমপান করলে তাঁকে নিষেধ করা উচিত এবং ক্ষতিকর দিকটা সুন্দর করে বোঝানো উচিত।
এক্ষেত্রে গনমাধ্যম ও সমাজসেবী সংগঠন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।সিগারেট বা ধূমপান জাতীয় অন্যান্য দ্রব্য উৎপাদন যাতে নিষিদ্ধ হয় সে ব্যাপারে সরকারকে আইনত কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে এই সব দ্রব্য থেকে যে পরিমান শুল্ক আদায় হয় তার চেয়ে বহুগুন দেশীয় মানব সম্পদ ধ্বংস হয়। এক্ষেত্রে সমস্ত্ম রাজনৈতিক দলকে বড়ো ভূমিকা পালন করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, কথায় আছে – ‘যখন যে অবস্থায় যে মূহুর্তে কেউ সিগারেট ছাড়ছেন তখন সেটাই তার জন্য সঠিক সময়’। অর্থাৎ ÔIt is never too late.